সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হলো যেভাবে

|

দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের এই যে যাত্রা, তা কি খুব সহজ ছিলো? মধ্যস্থতা করতে গিয়ে সহকর্মী মোহসীন-উল হাকিমকে মোকাবেলা করতে হয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির। বিশ্বাসযোগ্য হতে হয়েছে আড়াইশোরও বেশি জলদস্যুর।

২০১৬ সালের ৩১ মে। টান টান উত্তেজনা সুন্দরবনের পশুর নদে। দীর্ঘ যাত্রায় প্রথম সফলতা। যেখানে বলা হতো, সুন্দরবনে ভয়ঙ্কর এই দস্যুদের ভয়ে “বাঘে-হরিণে এক ঘাটে পানি খায়”। সেই দস্যুরা নিজ হাত জমা দিলেন ৫২টি অস্ত্র। শপথ নিলেন ভাল হয়ে যাওয়ার। প্রথম পর্যায়ে ওইদিন আত্মসমর্পণ করেন সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় ও ভয়ংকর দস্যুদল মাস্টার বাহিনী।

ওই বছরেরই মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৬টি ছোট-বড় বাহিনীর আত্মসমর্পণ। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত র‍্যাবের কাছে যমুনা টেলিভিশনের মধ্যস্থতায় ২০টি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। শেষ ৬টি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে আজ। ওই ৬ বাহিনীতে ছিলো ৩২৮ জন দস্যু। আর সাড়ে চার’শরও বেশি অস্ত্র।

মূলত ২০০৯ সাল থেকেই প্রক্রিয়া শুরু হয় এই স্বপ্নযাত্রার। আজ অবধি ১৩৭ বার সুন্দরবনে এসে দস্যুদের সঠিক পথে আসার স্বপ্ন ও সুযোগ দেখিয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মোহসীন-উল হাকিম।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি ছিলো দুই পক্ষের আস্থা অর্জন করা। বিশেষ করে দস্যুদের আস্থায় আনা এবং পাশাপাশি সরকারের পক্ষ অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও আস্থা অর্জন করতে হয়েছে। এজন্য সময় লেগেছে ৬ বছর।

কিন্তু, বছরের পর বছর শাপদশঙ্কুল পরিস্থিতি পেরোনোর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?

মোহসীন-উল হাকিম জানান, সুন্দরবনে দস্যুদের প্রধান শিকার গরীব জেলে ও বাওয়ালিরা। আমি চিন্তা করেছি, দস্যুদের যদি একবার উঠিয়ে আনা যায় তাহলে এই ৩০/৪০ লাখ মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে। অর্থনৈতিক যে চক্রে বাধা দস্যুতা তাদের সেখান থেকে বের করে আনলে আর্থিকভাবেও সচ্ছল হতে পারবে তারা। এটাই ছিলো উদ্দেশ্য।

সুন্দরবনতো দস্যুমুক্ত হলো। যারা ভয়ঙ্কর মানুষ থেকে স্বাভাবিক জীবনের কাতারে ফিরলেন তারা এখন কেমন আছেন?

আত্মসমর্পণ করা মাস্টার বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ জানান, তার একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজ আছে। সকাল ১০টায় খোলেন আর বন্ধ করেন রাত ১০টায়। যা কেনাবেচা হয় তা দিয়ে পরিবার নিয়ে শান্তিতে আছেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply