নুসরাত হত্যায় সর্বোচ্চ সাজার প্রত্যাশা বাদীপক্ষের

|

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

মামলার সব সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন এবং আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে মনে করছেন তারা।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরায় অসঙ্গতি ও পরস্পরবিরোধী তথ্য রয়েছে। ফলে আসামিরা খালাস পেতে পারে বলে তারা আশা করছেন।

নুসরাত হত্যা মামলায় বাদীপক্ষে ছিলেন বিচারিক আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহমেদ, অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান ও অ্যাডভোকেট এম শাহজাহান সাজু।

আসামিপক্ষে ছিলেন হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ ও এনামুল হক, ফেনী আদালতের সিনিয়র আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু, কামরুল হাসান, নূরুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন নয়ন ও মাহফুজুল হক, আহসান কবির বেঙ্গল, সিরাজুল হক মিন্টুসহ ২০ আইনজীবী।

বিচারিক আদালতের পিপি হাফেজ আহমেদ বলেন, ‘নুসরাত হত্যা মানুষের মনে মারাত্মকভাবে দাগ কেটেছে। এ জন্য কোনো সাক্ষীই অনুপস্থিত ছিলেন না। আমরা আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করছি। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আশা করছি।’

আসামিপক্ষের প্রবীণ আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন, ‘এই হত্যা প্রমাণে ৯২ সাক্ষীর প্রয়োজন ছিল না। পিবিআই আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে। অতিরিক্ত সাক্ষী দিয়ে ঘটনা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত সাক্ষী গ্রহণে বিভ্রান্তি বেড়েছে। অতিরিক্ত সাক্ষীর জবানবন্দিতে পরস্পরবিরোধী তথ্য চলে আসছে।’

আসামিপক্ষের অপর আইনজীবী কামরুল হাসান বলেন, ‘পিবিআই প্রত্যেক সাক্ষীর বক্তব্য চার্জশিটের সঙ্গে আদালতে পেশ করেছে। তাতেও বিভ্রান্তি দেখা যায়। আদালতে পেশ করা সাক্ষী মো. আকরাম, নূর উদ্দিন ও এনামুল হক রেজার জবানবন্দিতে নুসরাত হত্যার তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই তারিখ আসেনি। ঘটনা ঘটেছে ৬ এপ্রিল।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী নূরুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন নয়ন ও মাহফুজুল হক বলেন, ডাঙ্গিখাল, মাদ্রাসা পুকুর ও আসামি উম্মে সুলতানা পপির বাড়ি থেকে হত্যার সময় ব্যবহৃত বোরকা উদ্ধার এবং অন্যান্য ঘটনায় অতিরিক্ত ৪০-৫৫ জনকে সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এর কোনো প্রয়োজন ছিল না।

অন্যান্য ব্যাপারেও পিবিআই অতিরিক্ত সাক্ষী হাজির করেছে বলে তারা অভিমত দিয়েছেন। তারা বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল সাক্ষী ২০-২৫ জন। সঙ্গে ডাক্তার, কারাগার ও পুলিশ কর্মকর্তা মিলিয়ে ৪০-৪৫ সাক্ষীর জবানবন্দিতে জড়িতদের বিষয় প্রমাণ করা সম্ভব ছিল।

নুসরাত হত্যা মামলাটি করা হয় ৮ এপ্রিল। নুসরাতের ভাই নোমান এ মামলার বাদী। ১০ এপ্রিল থানা থেকে মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

৩৩ কার্যদিবসে ১৬ আসামিকে অভিযুক্ত করে এই মামলার চার্জশিট দেয় পিবিআই। পরে ২০ জুন চার্জ গঠন এবং ২৭ জুন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। চার্জশিটে ৯২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করবেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ। রায় কেন্দ্র করে ফেনী, সোনাগাজী ও নুসরাতের বাড়িতে নেয়া হয়েছে পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা।

রায়ে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে নুসরাতের পরিবার।

প্রসঙ্গত নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে এর আগে ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে।

নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এর পর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল।

৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত।

এ সময় তাকে কৌশলে একটি বহুতল ভবনে ডেকে নিয়ে যায় অধ্যক্ষের ভাগ্নি পপি। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।

চার্জশিটভুক্ত কারাবন্দি আসামিরা হলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজউদ্দৌলা (৫৭) ও মাদ্রাসার ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নূর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), ওই মাদ্রাসার ইংরেজি প্রভাষক আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মণি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply