যেসব দাবিতে ক্রিকেট বন্ধ রাখছেন ক্রিকেটাররা

|

সংগঠনের স্বাধীনতা, পারিশ্রমিক বৃদ্ধি, ঘরোয়া ক্রিকেটের সংস্কার, চুক্তি কাঠামোর পরিবর্তনসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এসব দাবি পূরণের আগ পর্যন্ত সকল ধরনের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ঘোষণা তাদের।

সোমবার দুপুরে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটের একাডেমি মাঠে জড়ো হন দেশের শীর্ষ ক্রিকেটাররা। একের পর এক ক্রিকেটাররা এসে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।

১. প্রথম দাবি উত্থাপন করেন জাতীয় দলের সাবেক অলরাউন্ডার ও ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ নাইম ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা প্লেয়াররা চুজ করবো আমাদের সংগঠন কোয়াবের কে প্রেসিডেস্ট হবে, কে সেক্রেটারি হবে। আমাদের ইলেকশনের মাধ্যমে এটা আমরা চুজ করবো।

২. এরপর কথা বলেন জাতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি বলেন, আপনারা জানেন প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের অবস্থা কী। যেভাবে প্রিমিয়ার লিগ হচ্ছে সেটি নিয়ে সব প্লেয়ারই অসন্তুষ্ট। পারিশ্রমিকের মানদণ্ড বেঁধে দেয়া হচ্ছে, খেলোয়াড়দের অনেক লিমিটেশন দিয়ে দেয়া হচ্ছে। আগে যেভাবে প্রিমিয়ার লিগটা চলতো, আমরা চাই সেভাবেই চলুক।

৩. বিপিএলে বিদেশি খেলোয়াড়ের সাথে দেশি খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিকে সামঞ্জস্য রাখা। বিদেশি খেলোয়াড় থেকে দেশি খেলোয়াড়দেরকে কম পারিশ্রমিক দেয়া হয়। ক্রিকেটারদের গ্রেড পছন্দ করার সুযোগ দেয়া উচিত। (মুশফিকুর রহিম)।

৪. ফার্স্ট ক্লাস খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফি এক লাখ টাকা হতে হবে। ফার্স্ট ক্লাস খেলোয়াড়দের বেতন ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। এছাড়া খেলোয়াড়দের প্রাকটিসের সুবিধা বাড়াতে হবে। বর্তমানে যাতায়াতের জন্য ২৫০০ টাকা দেয়া হয় সেটা বিবেচনা করতে হবে। প্লেন ফেয়ারের ব্যবস্থা করতে হবে। এমন হোটেলে ব্যবস্থা করা যেখানে জিম ও সুইমিং পুল থাকবে। এটা অবশ্যই পরের সিজনের আগে নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি ডিভিশনে হোম ভেন্যুতে প্র্যাকটিস সুবিধা রাখতে হবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের বলের মান ভালো না, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটা নিয়ে সমস্যা হয়। (সাকিব আল হাসান)।

৬. জাতীয় দলে চুক্তিভিত্তিক খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং এই সংখ্যা ৩০ জন করতে হবে। সাথে সাথে বেতন বাড়াতে হবে। (এনামুল হক জুনিয়র)।

৭. আমরা শুধু ক্রিকেটারদের নিয়ে কথা বলছি না বরং সবাইকে নিয়ে কথা বলছি। একটা গ্রাউন্ডস ম্যান সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে মাস শেষে ৫/৬ হাজার টাকা পান, আমরা আমাদের দেশি কোচদের প্রমোট করতে চাই, কিন্তু দেখা যায় আমাদের ২০ জন কোচের প্রাপ্য বেতনের সমান হয় একজন বিদেশি কোচের বেতন, একটা ট্যুরে বাংলাদেশি কোচের অধীনে প্লেয়াররা ভালো করছে। কিন্তু নেক্সট ট্যুরে সেই কোচ আর থাকে না, আর আম্পায়রিং নিয়ে আমরা সবাই কমপ্লেইন করি কিন্তু এটাকে প্রফেশন হিসেবে নিতে হলেতো তার লাইফের একটা সিকিউরিটি দিতে হবে। আপনারা সবাই জানেন তাদেরকে কী রকম পেমেন্ট করা হয়। একই কথা ফিজিও ও অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। (তামিম ইকবাল)।

৮. ডোমেস্টিকে আমরা ২টা ৪ দিনের টুর্নামেন্ট খেলি কিন্তু একদিনের ভার্সনে আমরা মাত্র ১টা টুর্নামেন্ট খেলি এটা আরেকটু বাড়াতে হবে। আর বিপিএল এর আগ মুহুর্তে আরেকটা টি-২০ টুর্নামেন্ট হওয়া জরুরি। ন্যাশনাল ক্রিকেট লীগের একটা ওডিআই টুর্নামেন্ট চালু করা হোক। (এনামুল হক বিজয়)

৯. ডোমেস্টিক টুর্নামেন্টের জন্য একটা নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। তাহলে আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারবো। (নুরুল ইসলাম সোহান)।

১০. বিপিএল এর বকেয়া টাকাটা যাতে নির্দিষ্ট সময়ে হাত পাই এটা একজন জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় হিসেবে এমন আচরণ প্রাপ্তি কাম্য নয়। (জুনায়েদ সিদ্দিকী)।

১১. ন্যাশনাল লীগের বাহিরের সময়টাতে খেলোয়াড়দের অন্যান্য ক্লাবে খেলার সুযোগ দিতে হবে, যাতে আমরা নুতন কিছু শিখতে পারি। (ফরহাদ রেজা)।

এরপর সাকিব আল হাসান বলেন, এখানে আমাদের ডোমেস্টিক নিয়েই যেহেতু কথা হচ্ছে এটা আসলে কাম্য নয়, এটা ঠিক করা খুব জরুরি। একটা ভালো প্লেয়ার উঠে আসতে দিতে হলে এই পাইপলাইন ঠিক করা জরুরি। আমাদের মহিলা টিমেরও হয়তো কিছু দাবি আছে। আসলে হুট করে এই সিদ্ধান্ত নেয়াতে তাদের খবর দেয়া যায়নি, তবে তারা আমাদের সাথে যোগ দিলে আমরা তাদের সাহায্য করবো।

সাকিব বলেন, আমরা আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্রিকেটের কোনো কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকবো না। এখানে, অনূর্ধ্ব-১৯ ও বয়সভিত্তিক দলগুলো বাদে ফার্স্ট ক্লাস, জাতীয় লীগ, ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল সকল ক্রিকেটের জন্যই আজকে থেকে এ বিরতি প্রযোজ্য।

বোর্ড যদি আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয় আমরা আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যাবো। আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর ক্রিকেটের পরিবেশ রেখে যেতে চাই।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply