যেখানে গাধাদেরও পাজামা পরানো হয়!

|

কাজ করতে না পারা বা সময়মতো সুযোগ কাজে না লাগানো ব্যক্তিকে ‘গাধা’ বলে তিরস্কার করি আমরা।
অথচ গাধাই হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে কর্মক্ষম প্রাণী। প্রাচীন যুগে বোঝা বহন করতে গাধার বিকল্প ভাবা হতো না।

সে সময় থেকেই গাধারা চাহিদা ছিল আকাশছোঁয়া। এর পর ইঞ্চিনচালিত বাহনের আবিস্কার হওয়ার পর গাধার চাহিদা একেবারেই কমে যেতে শুরু করে।

তবে ‘পোইটু গাধা’ নামের এক প্রজাতির গাধার চাহিদা এখনও আগের মতোই আছে। এতোটুকুনও কমেনি।

ফ্রান্সের পোইটু উপত্যকায় এদের আদি বাসস্থান বলে এমন নামকরণ করা হয়েছে এদের।

তবে এরা এখন বিলুপ্ত প্রায়। সারা বিশ্বে এদের সংখ্যা এখন ‘হাতে গোনা’। ২০০৫ সালে হিসার অনুযায়ী, সারা বিশ্বে পোইটু গাধার সংখ্যা মাত্র ৪৫০।

এবার জানা যাক, কেন এদের পাজামা পরিয়ে রাখা হয়।

তা জানতে বহু যুগ পেছনে যেতে হবে। ঐতিহাসিকদরা বলছেন, বিংশ শতকেও অন্তত ৩০ হাজার গাধার প্রতিপালন করা হত ফ্রান্সের পোইটু উপত্যকায়। সে সময় লবন আর পশম ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ কদর ছিল এই পোইটু গাধার।

কারণ পোইটু গাধাদের শরীরজুড়ে ভারী পশমে বোঝাই। সে পশম চাহিদা ছিল পুরো ইউরোপজুড়ে। এই পশম পেতে ইউরোপের অনেকেই পোইটু গাধার প্রতিপালন করতেন।

কিন্তু ছাড়পোকা আর মশার কামড়ের কারণে পোইটু গাধাদের পশম উৎকৃষ্ট মান হারাতো। মারাও পড়ত তারা। তাই সে সময় ছাড়পোকা আর মশার কামড় থেকে বাঁচাতে পোইটু গাধার চার পা মোটা কাপড়ে ঢেকে দিতেন পালকরা।

অনেকটা পাজামার মতো করে কাপড়গুলো পরানো হতো। তবে যুগ পেরিয়ে এখন আর পোইটু গাধার পশমের প্রয়োজন পড়ে না। তাছাড়া ব্যবসার পরিবহণেও কাজে লাগে না এদের।

তবে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখতে এখনও ফ্রান্সে পোইটু গাধা পালন করা হয়। আর ঐতিহ্যের খাতিরে পর্যটকদের মনোরঞ্জন করতে এখনও পোইটু গাধাদের পাজামা পরিয়ে রাখেন তাদের মনিবরা।

ঐতিহাসিকদের মতে, ১৭১৭ সালের পর থেকে ফ্রান্সের রাজা পঞ্চদশ লুইয়ের উদ্যোগে কৃষিকাজ ও পরিবহনের কাজে পোইটু গাধাদের ব্যবহার করা হতে থাকে। এর সঙ্গে এর পশমের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে এরা। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে যন্ত্র বা মোটরচালিত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে পোইটু গাধার চাহিদা কমে যায়।

বিশেষ প্রজাতির এই গাধা আকারে সাধারণ গাধার তুলনায় অনেক বড় এবং লম্বা। প্রায় ঘোড়ার মতোই দেখতে এই গাধা। এদের পরিশ্রম করার ক্ষমতাও অন্যান্য গাধার তুলনায় অনেক বেশি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply