রংপুর-৩ উপনির্বাচন: রাজু পেলেন নৌকা, রিটা রহমান ধানের শীষ

|

রংপুর-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বড় তিন রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। নৌকা নিয়ে লড়বেন মো. রেজাউল করিম রাজু। তিনি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ধানের শীষে লড়বেন রিটা রহমান। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি তার দল পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ বিলুপ্ত করে বিএনপিতে একীভূত হয়েছেন।

জাতীয় পার্টির এই ঘাঁটিতে লাঙ্গল নিয়ে লড়বেন দলের প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ। মনোনয়ন পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রার্থীরা।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের মৃত্যুতে আসনটি শূণ্য হয়। আগামী ৫ অক্টোবর ভোটগ্রহন হবে। মনোনয়নপত্র জমা ৯ সেপ্টেম্বর, বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর।

শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় মো. রেজাউল করিম রাজুকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ১৬ জন। রাজুকে মনোনয়ন দিলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সমঝোতায় তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকবেন না বলে গুঞ্জন রয়েছে। প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে তিনি জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দিতে পারেন- এরকম আভাস দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের রংপুর মহানগর কমিটির এক শীর্ষ নেতা।

রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি সাফিউর রহমান সফি এধরনের বক্তব্যকে গুজব বলে অখ্যায়িত করে বলেছেন, এখন পর্যন্ত দলের প্রার্থী রাজু। আমরা এখন ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সব কিছুই নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার ওপর। আগে বলা মুশকিল। রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে। সেটা রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত হবে।

এদিকে নানা আলোচনার পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা রবিবার প্রার্থী হিসেবে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদের নাম ঘোষণা করেন।

অপরদিকে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ (পিপিবি)-এর সভাপতি রিটা রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

রোববার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই মনোনয়নের কথা জানান।

তিনি বলেন, রংপুর-৩ আসনে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের রিটা রহমানকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জোটের পক্ষ থেকে এ আসনে রিটাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। রিটা রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য হয়। আগামী ৫ অক্টোবর রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা ৯ সেপ্টেম্বর, বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর।

শনিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে দলের বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেন। এ আসনে প্রার্থী হিসেবে সদ্য প্রয়াত মহানগর সভাপতি মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া হোসেন, রংপুর মহানগর সহ-সভাপতি কাওসার জামান বাবলা, মহানগর সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, জেলা সাধারণ সম্পাদক রইসউদ্দিন ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের (পিপিবি) চেয়ারম্যান রিটা রহমান সাক্ষাৎকার দেন।

সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যায়। কয়েক নেতা রিটা রহমানকে প্রার্থী না দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন।

তারা বলেন, বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে স্থানীয় নেতাকর্মীরা হুলিয়া মাথায় নিয়ে মাঠে ছিলেন। তাই তাদের মধ্য থেকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া উচিত। এতে নেতাকর্মীরা মূল্যায়িত হবেন। ভবিষ্যতে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে নামার সাহস পাবেন। দলের বাইরে গিয়ে কাউকে মনোনয়ন দিলে স্থানীয়রা তা ভালোভাবে নেবে না। সে ক্ষেত্রে সদ্য প্রয়াত মোজাফফর হোসেনের স্ত্রীকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তারা মত দেন। কিন্তু বৈঠকে কয়েক নেতা রিটা রহমানের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন।

তারা বলেন, রিটা রহমান স্থানীয়ভাবে ততটা সক্রিয় না হলেও জাতীয়ভাবে তার পরিবারের একটা পরিচিতি আছে। তাছাড়া একাদশ নির্বাচনে নানা অনিয়মের পরও তিনি ভালো ভোট পেয়েছেন।

ওই নেতারা আরও বলেন, স্থানীয় বিএনপির মধ্যে একাধিক গ্রুপ রয়েছে। কোনো গ্রুপের নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হলে বাকিরা বিদ্রোহ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে রিটা রহমানকে মনোনয়ন দেয়া ভালো হবে বলে তারা যুক্তি তুলে ধরেন।

মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক চলাকালে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপে সংযুক্ত ছিলেন। তিনি সবার মতামত শুনেন। স্থায়ী কমিটির নেতারা প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পুরো দায়িত্ব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর ছেড়ে দেন। বিএনপিপন্থি কয়েকজন বুদ্ধিজীবীও রিটা রহমানের পক্ষে অবস্থান নেন বলে জানা গেছে।

(সূত্র: যুগান্তর)


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply