পর্দাকাণ্ড: এক পর্দার দাম ৩৭ লাখ টাকা!

|

আইসিইউর রোগীকে আড়াল করে রাখার পর্দার দাম ৩৭ লাখ টাকা! ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে এমন নজিরবিহীন দুর্নীতি ঘটেছে প্রায় ৪১ কোটি টাকার। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই দুর্নীতির তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। যদিও এখনো আদেশনামা পায়নি দুদক। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের পরিচালকও দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সরবরাহকারী অনিক ট্রেডার্সের নামে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল আগেও।

আইসিইউর রোগীকে আড়াল করে রাখার পর্দা। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সেটি কিনতে ব্যয় করেছে ৩৭ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়; ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার স্টেথিস্কোপের জন্য খরচ করেছে, ১ লাখ সাড়ে ১২ হাজার টাকা করে। ১০ হাজার টাকার ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার মাপার মেশিন কেনা হয় ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। অব্যবহৃত আইসিইউর জন্য অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্টের দাম ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। খোদ জাপান থেকে আনলে এটার খরচ পড়বে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকা। বিআইএস মনিটরিং প্ল্যান্ট স্থাপনে ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ দেখিয়েছে ফরিদপুর মেডিকেল। এমন প্ল্যান্ট স্থাপনে সবোর্চ্চ খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।

এভাবে প্রায় ১৮৬ গুণ পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে ১৬৬টি যন্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে মেসার্স অনিক ট্রেডার্স। অথচ এই অনিক ট্রেডার্স-ই দুদকের কালো তালিকাভুক্ত।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অকল্পনীয় দামে অনিক ট্রেডার্স এসব যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। হাসপাতালের সে সময়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই দুর্নীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে নামে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে আসে, প্রতিষ্ঠানটির জন্য মোট ১৬৬ ধরনের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৪১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সেখানে ফরিদপুর মেডিকেলে অনিক ট্রেডার্স ১১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে। অথচ বিল দেখানো হয় ৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা। লোপাট হয় ৪১ কোটি টাকারও বেশি।

তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সুপারিশ করেছে এ ঘটনায় সংস্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দুনীতির প্রমাণ পাওয়ায় অনিক ট্রেডার্সের বিল আটকে দেয় মন্ত্রণালয়। এনিয়ে হাইকোর্টে যায় প্রতিষ্ঠানটি। আদালত সব কাগজপত্র চাইলেই প্রকাশ হয় নজীরবিহীন এই দুর্নীতির খবর। পূর্ণ তদন্ত করতে দুদকে ৬ মাস সময় দেন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসানের দ্বৈত বেঞ্চ।

দুদকের আইনজীবী জানান, আদালতের নির্দেশ হাতে পেলেই তদন্তে নামবে তারা।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের পরিচালকও দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বলেছেন দুদকের তদন্তে সর্বাত্বক সহায়তা করা হবে।

চিকিৎসকদের মত পেশার মানুষ এমন দুর্নীতিতে জড়ানো মর্মান্তিক বলে মন্তব্য করেন, আদালত।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply