সালমান শাহ’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ: রহস্যের জট খোলেনি ২৩ বছরেও

|

দীর্ঘ ২৩ বছর পার হলেও বাংলা সিনেমার ‘স্টাইল আইকন’খ্যাত একসময়কার তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সামলান শাহর মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। কয়েক দফা তদন্তে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তা অদ্যাবধি মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার ও অগুনতি ভক্ত।

২০১৬ সালের শেষের দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নতুন করে তদন্তভার দেয়া হয়।

সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বর পিবিআই আদালতে মামলার ‘তদন্ত অগ্রগতি’ প্রতিবেদন দাখিল করে। তবে সেই প্রতিবেদনেও ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’র কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন তদন্তাধীন এ মামলার অনেক সাক্ষী ও আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে খোদ তদন্ত সংস্থাই হিমশিম খাচ্ছে। তদন্ত শেষে কবে নাগাদ প্রতিবেদন দেয়া হবে- এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউ। এদিকে এটিকে ‘হত্যা’ বলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী। আগামী ১ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।

জানতে চাইলে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী লন্ডন থেকে মুঠোফোন বলেন, এটিকে আত্মহত্যা বলা হলে মানুষ হাসবে। এটিকে হত্যা বলতে হবে। কাদের স্বার্থে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দিতে এত দীর্ঘ সময় নেয়া হচ্ছে? নীলা চৌধুরী মারা যেতে পারে, কিন্তু সালমান শাহর ভক্তরা কেউ ছাড় দেবে না। আমার নীরবতা দুর্বলতা নয়। আমার নীরবতাই প্রতিবাদ। যে দেশে বিচার নেই, সেখানে আমি সরব হব কেন? সরকারের লোকজনই বিচারের দীর্ঘসূত্রতা করতে ইন্ধন জোগাচ্ছেন।

জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম (বাবুল) বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। পুরনো এ মামলায় নতুন করে কোনো আলামত পাওয়া ও সাক্ষীদের খুঁজে বের করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। তদন্তে বিশেষ কোনো অগ্রগতি নেই। ইতিমধ্যেই আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সাক্ষীদের মধ্যে ৩৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাত সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। যতক্ষণ মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া না যাবে, ততক্ষণ কোনো কিছুই করতে পারব না।

জানতে চাইলে নীলা চৌধুরীর অন্যতম আইনজীবী ফারুক বলেন, সাক্ষীদের খুঁজে পেতে তদন্ত কর্মকর্তাকে সাহায্য করছি। বিলম্ব হলেও আশা করছি তদন্ত সংস্থা রিপোর্ট দিতে পারবে।

তদন্তের অগ্রগতি যতটুকু : ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের বাসা থেকে সালমান শাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী অপমৃত্যুর মামলা করেন। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। সেখানে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করা হলে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

সেখানেও সালমানের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দেন যাতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা বলা হয়। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র‌্যাবকে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল একটি রিভিশন মামলা করে। ওই বছরের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মামলাটি র‌্যাব তদন্ত করতে পারবে না মর্মে আদেশ দেন। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর পিবিআই আদালতে তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে। সেখানে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৩৯ সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড ও সাক্ষীদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাতজনের জবানবন্দি রেকর্ডের তথ্য উল্লেখ করা হয়।

আলোচিত সেই ভিডিও বার্তা : ২০১৭ সালের মাঝামাঝি এক সময়ের বিউটিশিয়ান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাবেয়া সুলতানা রুবি সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘হত্যা’ বলে আখ্যা দেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছিল। আমার স্বামী তার খুনের সঙ্গে জড়িত।’ এরপর ওই বছরের ৯ আগস্ট নতুন আরেকটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি আগেরবার যেটা বলেছি সেটাতে আমার রং (ভুল) ছিল। এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা সামিরা (সালমানের স্ত্রী) এবং তার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বের হবে।
সূত্র: যুগান্তর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply