যেভাবে দূর করবেন স্মার্টফোনের আসক্তি

|

পড়াশোনা কিংবা বিশেষ কোনো কাজের ফাঁকে স্মার্টফোনটি হাতে নিলেন, এরপর কতটা সময় কীভাবে কেটে গেল টেরই পেলেন না।

স্মার্টফোনে আসক্তি মহামারীর মতো ছড়িয়ে গেছে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক নয়, এ আসক্তি থাবা বসিয়েছে শিশু-কিশোরদের অভ্যাসেও।

মোবাইল আসক্তির প্রভাব পড়ছে তাদের দৈনন্দিন জীবনে। বিভিন্ন মানসিক সমস্যার পাশাপাশি মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার ডেকে আনছে নানা বিপর্যয়। স্মার্টফোনের ভয়াল এ আসক্তি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার উপায় বাতলিয়েছেন-

স্মার্টফোনের সর্বনাশা আসক্তি কাটাতে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ। ফোনে থাকা অ্যাপ যেমন সময় খেয়ে ফেলছে, আবার অন্য অ্যাপ তা বাঁচিয়েও দিতে পারে বলে মনে করছেন এসব অ্যাপ নির্মাতা।

নির্দিষ্ট সময়ের বেশি স্মার্টফোনটি ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীকে সতর্কবার্তা দেয় কোনো অ্যাপ, কোনোটি বন্ধ করে দেয় ইন্টারনেট সংযোগ। আবার কিছু অ্যাপ একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে বাধা দেয়। অ্যাপ নির্মাতারা বলছেন, এভাবেই ধীরে ধীরে মোবাইল ব্যবহারের সময় কমিয়ে ফেলা যাবে।

অ্যাপব্লকার

মূলত অ্যাপব্লকারও নিজেই একটি অ্যাপ। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অন্য অ্যাপব্লক করে রাখা যায়। বিশেষ কাজের সময় চাইলে নির্দিষ্ট কয়েকটি অ্যাপ চিহ্নিত করেন সেগুলোকে ব্লক করে রাখা যাবে। এ সুবিধায় ব্যবহারকারী ব্লক করা অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশনগুলো অ্যাপ আনব্লক করার পরে দেখতে পাবেন।

এতে রয়েছে পাসওয়ার্ড ব্যবহারের সুবিধা। ফলে অন্য কেউ চাইলে সেটিংস পরিবর্তন করতে পারবে না। এটির মাধ্যমে প্রতিদিন টাইম লিমিট করে দিতে পারেন। গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যাবে। ইতিমধ্যে ৪.২ রেটিংপ্রাপ্ত অ্যাপটি দশ লাখের বেশি ডাউনলোড হয়েছে।

ইওর আওয়ার

অনেকেরই ধারণা স্মার্টফোন ছাড়া একদিনও থাকা সম্ভব নয়। আপনার আসক্তির লেভেল কম না বেশি, তা জানতে ফোনে ইন্সটল করে নিতে পারেন ‘ইওর আওয়ার’ অ্যাপটি।

অ্যাপটি ব্যবহারকারীর ফোন ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী বলে দেবে আসক্তির লেভেল সম্পর্কে। তারপর আসক্তি কাটিয়ে উঠতেও সহায়তা করবে এটি। ব্যবহারকারীরা এটির মাধ্যমে প্রতিদিন কতটুকু সময় ফোনে কাটাবেন সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে আসক্তি কমাতে পারবেন।

অ্যাপটির সাহায্যে কত সময় ফোনের স্ক্রিন অন ছিল, কোন সময় কোন অ্যাপ ব্যবহার করেছেন ইত্যাদি তথ্য টাইমলাইন আকারে পাওয়া যাবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে ৪.৫ রেটিংপ্রাপ্ত এ অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।

স্টে ফোকাস

স্মার্টফোনে আসক্তির অন্যতম কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি দুর্বলতা। যারা একটু পরপর ফেসবুক বা টুইটারে ঢু মারেন। এ অ্যাপটি তাদের আসক্তি কমাতে সহায়তা করতে পারবে।

এর মাধ্যমে প্রতিদিন কতবার ফেসবুক অ্যাপ চালু করেন বা কত সময় চালাচ্ছেন এমন হিসাব জানতে পারবেন; তা থেকে কতটা সময় নষ্ট হচ্ছে তা জেনে নিতে পারবেন।

এর মাধ্যমে আপনি ফোনে থাকা কোন অ্যাপ কতবার চালু করবেন তা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। পরে অ্যাপটি নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে আপনি নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে বেশি অ্যাপটি ব্যবহার করতে চাইছেন।

এ অ্যাপে ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন। ৪.৫ রেটিংপ্রাপ্ত অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যাবে।

তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যে জিনিসের প্রতি আসক্তি থাকে সেটির মাধ্যমেই আসক্তি কাটিয়ে ওঠা কতটা সম্ভব?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে কোনো ধরনের আসক্তি কমানোর পদ্ধতি ব্যক্তিবিশেষে আলাদা হয়। উদাহরণস্বরূপ অনেকে একদিনে ধূমপানের মতো আসক্তিও ছেড়ে দিতে পারে না, আবার অনেকে ছাড়েন ধীরে ধীরে। ফলে নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ সবার মোবাইল আসক্তির জন্য কার্যকর হবে, এমনটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।

তাহলে স্মার্টফোনের এ ভয়াল আসক্তি মুক্তির উপায় কী? স্মার্টফোনের এরূপ আসক্তিকে বিজ্ঞানীরা ‘নোমোফোবিয়া’ বলছেন। এ নোমোফোবিয়া থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞরা কিছু উপায় জানিয়েছেন।

ফোন ব্যবহারের সময় নির্ধারণ

স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করুন। দিনে কতবার স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন তা ঠিক করে নিন। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন দিনে ২০ বারের বেশি স্মার্টফোন দেখবেন না। এ ছাড়া খাওয়া ও লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন না।

স্মার্টফোন নিয়ে বিছানায় নয়

ঘুমানোর আগে ফোন বন্ধ করে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। ঘুমানোর সময় ফোন বন্ধ করলে তেমন কোনো ক্ষতি নেই ভেবে ফোন বন্ধ করে দিন। ঘুম কম হওয়া বা অনিদ্রার অন্যতম একটি কারণ স্মার্টফোন আসক্তি। অনেকে সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য স্মার্টফোনে অ্যালার্ম সেট করেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ব্যবহারকারীরা ঘুম থেকে উঠে অ্যালার্ম বন্ধ করে ফোনের নোটিফিকেশন চেক করা শুরু করে দেন। এতে অনেক সময় কেটে যায়। এমন সমস্যা এড়াতে স্মার্টফোনে অ্যালার্মের বদলে অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ

আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোন থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ সরিয়ে ফেলুন। স্মার্টফোনে ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপগুলো দরকারি হলেও আসক্তি কমাতে চাইলে এসব অ্যাপ সরিয়ে ফেলতে হবে। স্মার্টফোনে আরও অনেক অ্যাপ আছে, যেগুলো সময় নষ্ট করে। এ ধরনের অ্যাপ সরালে আপনার মূল্যবান সময় বাঁচবে এবং ফোনের স্টোরেজ ও চার্জ কম ফুরাবে।

আড্ডায় স্মার্টফোন পরিহার

অনেকেই পারিবারিক কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার মাঝেও স্মার্টফোনে ব্যস্ত থাকেন। এর ফলে পারিবারিক বন্ধন হালকা হয়ে যায়। তাই এসব পরিস্থিতিতে স্মার্টফোন এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

মেডিটেশন

দিনে অন্তত ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন বা অন্য কোনো মেন্টাল রিল্যাক্সেশন এক্সারসাইজের জন্য নির্ধারিত রাখুন। শুধু মোবাইল নেশা নয়, যে কোনো ক্ষেত্রেই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করার এটি একটি কার্যকর উপায়।

-সাইফ আহমাদ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply