সহকর্মীর প্রেমে পড়লে যা করবেন

|

দীর্ঘদিন একসাথে কাজ করায় সহকর্মীর ওপর দুর্বলতা আসতে পারে। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে তা অসুবিধা তৈরি করে। কখনও তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ক্যারিয়ারে। তাই কিভাবে নিজের অনুভূতিকে অনুশাসনে রেখে কাজ করবেন তা জানাচ্ছেন তালহা বিন জসিম

অন্য সহকর্মীদের মতো আচরণ
যার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছেন তার সাথে আলাদা আচরণ করবেন না, অন্যান্য সহকর্মীর সাথে যেভাবে করেন সেরকম করুন যদিও এটা চ্যালেঞ্জিং। আর এ জন্য যৌক্তিক কারণ ছাড়া দেখা না করাই ভালো, যেমন- একসাথে লাঞ্চ না করা; অফিস শেষে আড্ডা না দেয়া।

মজা করেও প্রেমের বহিঃপ্রকাশ না করা
অনেকে সহকর্মীর সাথে মজা করে ভালোবাসার সম্পর্ক করে। এটা করবেন না। এতে করে এক সময় আপনি আপনার ইমোশন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন না। যেমন- দেখা হলেই রোম্যান্টিক নামে ডাকা, হেসে কথা বলা। অনেক সময় কাজের প্রয়োজনে আপনাকে কঠোর হতে হবে, কিন্তু ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় আপনি তা পারবেন না।

পক্ষপাতিত্ব দেখাবেন না
যাকে আপনি পছন্দ করেন অফিসিয়ালি তিনি হয়তো কোন যুক্তি দিচ্ছেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া সবসময় তার পক্ষ নিবেন না। সব কথায় সায় দিবেন না। যদি আপনি বস হন তাহলে সব কথা তাকেই বলার সুযোগ না দিয়ে, অন্যদেরও বলার সুযোগ দিন। এটা না করলে আপনার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যাবে।

ছুটি নেয়া ও চিন্তা করা
যদি কোনভাবেই নিজের ইমোশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, তাহলে কিছুদিন ছুটি নিন, নিজেকে প্রশ্ন করুন আসলে আপনি কি চান? এই জবটা আপনার স্বপ্নের চাকরি; একটা সম্পর্কের কারণে এটা ক্ষতি করবেন কিনা? নিজেকে বলুন এটা সত্যিকারের ভালোবাসা কিনা নাকি মোহ নাকি শুধু ভালোলাগা। তাকে কতদিন ধরে চিনেন, নাকি একসাথে কাজ করেন বলে দুর্বলতা অনুভব করছেন কিনা। একবার ভাবুন অফিস ছেড়ে দিলে তার প্রতি আগ্রহ থাকবে কিনা। এভাবেও ভাবতে পারেন দীর্ঘদিন কাজ করায় বা দিনের বেশিরভাগ সময় একসাথে থাকায় একটু আগ্রহ তৈরি হয় যা একদম স্বাভাবিক ঘটনা। এভাবে প্রশ্ন করে নিজের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করুন এবং নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করুন।

অন্য বিভাগ ও অন্য অফিসে কাজ নেয়া
যদি একেবারেই নিজেকে সামাল দিতে না পারেন, তবে প্রতিষ্ঠানের অন্য বিভাগে চলে যেতে পারেন। কিংবা কর্মস্থলও বদলে ফেলতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে বসকে কোনভাবেই মূল সমস্যার কথা বলবেন না। বলুন আপনি আরও চ্যালেঞ্জ নিতে চান তাই ঐ বিভাগে কাজ করতে চান।

কাজ ছাড়া যোগাযোগ বন্ধ
নির্দিষ্ট কাজের জন্য যতটুকু যোগাযোগ করতে হয় ততটুকু করুন। এর বাইরে শুধু শুধু ইমেল বা চ্যাটিং করবেন না। চ্যাটিংয়ে কখনও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ করবেন না। যেমন- ছুটির দিনে কি করেন। কি কি পছন্দ করেন। আবার পছন্দের ব্যক্তি যদি আপনাকে ব্যক্তিগত বিষয় আলাপ করে তাহলে হ্যা বা না উত্তর দিন। মোট কথা উত্তর ছোট করে যোগাযোগ সীমিত রাখুন। বারবার তার ফেসবুক প্রোফাইল চেক করবেন না।

ব্যক্তিগত সমস্যায় জড়াবেন না
অফিসের সহকর্মী হিসেবে আচরন করুন। কখনও তার ব্যক্তিগত সমস্যায় জড়িয়ে পড়বেন না। যেমন তার ছেলে/মেয়ে বন্ধুর সাথে সর্ম্পকের টানাপোড়েনে সাহায্য করা। এমনকি খুব সাহায্যপ্রবণ ও ভালো বন্ধু হতে যাবেন না। তার আনন্দের জন্য নিজেকে জড়াবেন না। সারাদিন কি কি করলেন এ নিয়ে রাতে মেসেজ বা ইমেইল, ফোন করে বসবেন না।

কাজের শেষে আড্ডা নয়
কয়েকজন মিলে অফিস শেষে আড্ডা দেয়া বা লাঞ্চ, ডিনার, পার্টিতে যাওয়াটা খুব কমন ব্যাপার। কিন্তু পছন্দের ব্যক্তি অফার করলেও যাবেন না, অজুহাত দিয়ে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। এমনকি অফিসিয়াল কোন অনুষ্ঠানে দুজনে গেলে দৃষ্টি আকর্ষণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং আলাদা টেবিলে বসার চেষ্টা করুন।

সামনা সামনি যোগাযোগ পরিহার করুন
যদি কাজটা সামনা সামনি দেখা করা ছাড়াই সম্পাদন করা যায় তাহলে তাই করুন। ইমেইল, ফোন বা অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যেমে করা যায় তাহলে সেটাই করুন। তবে এটা সবসময় করবেন না। এতে মনে হতে পারে আপনি তাকে এড়িয়ে চলছেন। মনে মনে নিরাপদ ও পরিষ্কার সীমারেখা তৈরি করে নিন যার বাইরে আপনি কিছু করবেন না। পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়ে ফ্যান্টাসি পরিহার করে বাস্তবতা নিয়ে ভাবুন।

ডেটিং না করা
ডেটিং করা থেকে বিরত থাকুন। এটা ক্যারিয়ারের জন্যও ভালো। এমনকি দীর্ঘক্ষণ একসাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। আপনি বস হয়ে জুনিয়রদের সাথে ডেটিং করলে অন্যরা মনে করবে আপনি আপনার ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। আর আপনি জুনিয়র হলে অন্যরা ভাববে আপনি আলাদা সুযোগ নিতে চাচ্ছেন।

নিজের শখের প্রতি মনোযোগ দিন
কেনো সম্পর্ক করবেন না এর পক্ষে যুক্তি দাড় করিয়ে ফেলুন। যেমন যাকে পছন্দ করেন তার কি কি নেতিবাচক দিক আছে, সেগুলো আপনি মেনে নিবেন কিনা। অফিসে জানাজানি হলে ক্যারিয়ারের যে ক্ষতি হবে তা কিভাবে সামলাবেন। আপনি প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার পর নেতিবাচক উত্তর আসলে কি অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হবে। অথবা সম্পর্ক হওয়ার পর ব্রেকআপ হলে একসাথে কিভাবে কাজ করবেন। এসব ভেবে নিজেকে বুঝিয়ে সম্পর্কে আর এগুনো থেকে বিরত থাকুন। মনোযোগটা অন্যদিকে নিতে নিজের কোন শখের ওপর দিকে ঝুঁকে পড়ুন। নতুন নতুন শখ আবিষ্কার করুন তা বাস্তবে রূপ দিন অথবা নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হউন। ক্যারিয়ার উন্নতি করতে নিজের দক্ষতা বিকাশেও কাজ করতে পারেন।

সামাজিক কাজে জড়িয়ে পরুন
হয়তো সপ্তাহ জুড়ে কাজে ব্যস্ত থাকায় পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা হয়না অনেক দিন; যোগাযোগ করুন, আড্ডা দিন। কোন সামাজিক সংগঠনের সদস্য হয়ে তার কার্যক্রমে নেমে পড়ুন দেখবেন কোথায় চলে গেছে আপনার রোম্যান্স।

সম্পর্কের যত্ন করুন
হয়তো আপনি বিবাহিত বা এনগেজড। তাহলে এই সম্পর্কে মনোযোগ দিন। পরিচর্যা করে এসব সম্পর্ক উন্নতি করুন। কোথাও ঘুরতে যান একসাথে। বাইরে খেয়ে আসুন। মোট কথা সম্পূর্ণ মনোযোগ বর্তমান সর্ম্পকের ওপর নিয়ে আসুন।

স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন
যেকোন অজুহাতে সহকর্মীকে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। এমনকি অফিসিয়ালি হ্যাণ্ডশেক ইত্যাদি এড়িয়ে চলা ভালো।

ইমোশনকে শিল্পেরূপ দিন
ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে গান, গল্প, কবিতা, উপন্যাস লিখে ফেলুন আবার ছবিও আঁকতে পারেন। মোটকথা অনুভূতি প্রকাশ করুন অন্য মাধ্যমে আর তা অবশ্যই শৈল্পিক হতে হবে।

ভালো কারও জন্য অপেক্ষা
মনকে বলতে পারেন, এত দ্রুত কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবো নাকি আরও ভালো ও উপযুক্ত কারো জন্য অপেক্ষা করবো। পুনরায় ভেবে দেখুন, যাকে পছন্দ করছেন তার মধ্যে আপনার মনের যত চাওয়া তা কি আছে। এভাবে ভেবে দেখে আরও মনের মতো কারও জন্য অপেক্ষা করতে পারেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply